চামুণ্ডা দেবীর কাহিনী

চামুণ্ডা হলেন একজন প্রধান হিন্দু দেবী। চামুন্ডা হলেন আদ্যাশক্তি,ভগবতী। তিনি সপ্ত মাতৃকার মধ্যে প্রধানা। তাঁর অপর নাম চামুণ্ডী, চামুণ্ডেশ্বরী ও চর্চিকা। চামুন্ডা হলেন আদিশক্তি, আবার তিনিই ভগবতী দূর্গা। চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুরকে হত্যা করে তিনি ‘চামুণ্ডা’ নামে পরিচিত হন। চামুণ্ডাকে দেবী কালীর অপর রূপ মনে করা হয়।
পার্বতী, চণ্ডী, দুর্গা, চামুণ্ডা ও কালী এক ও অভিন্ন। কথিত আছে, চামুণ্ডার আবাসস্থল হল শ্মশানভূমি বা ডুমুর গাছ। আনুষ্ঠানিকভাবে পশুবলি দিয়ে ও মদ নিবেদন করে এই দেবীর পূজা করা হয়। প্রাচীনকালে চামুণ্ডার পূজায় নরবলিও দেওয়া হত। চামুণ্ডা প্রকৃতপক্ষে একজন আদিবাসী দেবী ছিলেন। পরবর্তীকালে তাকে হিন্দুধর্মে গ্রহণ করা হয় এবং তারও পরে চামুণ্ডা হিন্দু দেবমণ্ডলীতে স্থান পান।
জৈনধর্মেও চামুণ্ডার পূজা প্রচলিত আছে। তবে জৈনরা মদ ও মাংসের পরিবর্তে নিরামিষ নৈবেদ্য নিবেদন করে তার পূজা করেন।রামকৃষ্ণ ভাণ্ডারকরের মতে, চামুণ্ডা প্রকৃতপক্ষে মধ্যভারতের বিন্ধ্য অঞ্চলের অরণ্যচারী উপজাতি সমাজে পূজিত দেবী। এই সকল উপজাতিগুলির মধ্যে চামুণ্ডার উদ্দেশ্যে পশু ও নরবলি প্রদান এবং মদ উৎসর্গের প্রথা বিদ্যমান ছিল।
হিন্দু দেবমণ্ডলীতে স্থানলাভের পরেও, চামুণ্ডার তান্ত্রিক উপাসনায় এই সকল প্রথা থেকেই যায়। ভাণ্ডারকরের মতে, চামুণ্ডার ভয়াল রূপের কারণ হল, বৈদিক দেবতা রুদ্র বা কখনও কখনও অগ্নির সঙ্গে তার সম্পর্ক স্থাপন। ওয়াঙ্গুও দেবীর উপজাতীয় উৎস সংক্রান্ত তত্ত্বটিকে সমর্থন করেন।
দেবী চামুণ্ডা রক্ত অথবা কৃষ্ণবর্ণা; নরমুণ্ডমালা শোভিতা; বর্ণনাভেদে চতুঃ, অষ্ট, দশ বা দ্বাদশভূজা; ডমরু, ত্রিশূল, খড়্গ, সর্প, খট্বাঙ্গ, বজ্র, ছিন্নমুণ্ড ও রক্তপূর্ণ পানপাত্র ধারিণী; শব অথবা প্রেতের উপর উপবিষ্টা অথবা পরাভূত দৈত্য বা প্রেতাসনে স্থিতা; ত্রিনয়না; কঙ্কালসার দেহ, ভয়াল মুখমণ্ডল, লম্বিত স্তন, সম্মুখপ্রসারিত দন্তপংক্তি, দীর্ঘ নখর ও স্ফীত উদর যুক্তা; অস্থি,
কঙ্কাল, সর্প ও বিছের অলংকারে ভূষিতা, যা ব্যাধি ও মৃত্যুর প্রতীক; নরকরোটীর যজ্ঞোপবীত ধারিণী; মস্তকে জটার মুকুট এবং কোনো কোনো বর্ণনানুসারে মস্তকে অর্ধচন্দ্র শোভিতা। তিনি তার কোটরগত চক্ষু দ্বারা জগৎ ভষ্মীভূত করেন। ভূত ও প্রেতগণ তার সঙ্গী। বিভিন্ন বর্ণনায় নরকঙ্কাল ও শৃগালাদি পশুও তাকে বেষ্টন করে থাকে।
যে শবের উপর দেবী উপবিষ্ট থাকেন, তার শৃগালের দল সেই শবের মাংস ভক্ষণ করে। চামুণ্ডা তার পরাজিত শত্রুদের রক্ত পান করেন। সেই শত্রু দৈত্যদের ছিন্ন মুণ্ড থেকে পতিত রক্ত তার সহচর প্রেত ও শৃগালেরাও পান করে থাকে। সকল মাতৃকাই, বিশেষত চামুণ্ডা, রক্তপান করে থাকেন। কোনো কোনো মতে, তিনি তার বাহন পেচকের পৃষ্ঠে আরোহণ করেন। তার ধ্বজায় বাজপাখির চিত্র অঙ্কিত।হিন্দু দেবীরা সাধারণত সুডৌল স্তনযুক্তা ও সুন্দরী হন। কিন্তু চামুণ্ডার রূপ তাদের বিপরীত। এই রূপ জরা, মৃত্যু, ক্ষয় ও ধ্বংসের প্রতীক।