সাঁতরাগাছি

সাঁতরাগাছি

সাঁতরাগাছি Santragachi ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হাওড়া জেলার হাওড়া শহরের একটা অঞ্চল। এটি কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির অধিক্ষেত্রের একটা অংশ ও হাওড়া পুরসভার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সাঁতরাগাছি জংশন রেলওয়ে স্টেশন যেটা দক্ষিণ পূর্ব রেলপথের জংশন স্টেশন। সাঁতরাগাছি জংশন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের একটি ব্যস্ত স্টেশন।

হাওড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশন থেকে সাঁতরাগাছি স্টেশনের দূরত্ব রেলপথে ৭ কিলোমিটার। সাঁতরাগাছি স্টেশনে রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের দূরপাল্লার ট্রেন ও সমস্ত প্রকার ট্রেনের ইঞ্জিনের কারশেড। সাঁতরাগাছি তে অবস্থিত কলকাতা সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাস। এই স্টেশনের নিকটে রয়েছে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে যা কলকাতার প্রবেশপথ ও হুগলি ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ সংযুক্ত করে এবং ন্যাশনাল হাইওয়ের মাধ্যমে দিল্লি ও মুম্বাই এর সাথে সড়ক পথে সংযুক্ত।

সাঁতরাগাছি তে অবস্থিত ব্যক্তিমালিকানায় রেলের পণ্যবাহী বগি তৈরির কার্যালয়সহ কয়েকটি শিল্প কারখানা এবং বিস্তৃত রেল কলোনি। হাওড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশন এর বিকল্প হিসেবে সাঁতরাগাছি জংশন রেলওয়ে স্টেশন আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। বড়ো একটা হ্রদের জন্যেও জায়গাটা জনপ্রিয়, সাঁতরাগাছি ঝিল নামে পরিচিত এই জলাশয়ে শীতের মাসগুলিতে পরিযায়ী পাখির ভিড় জমে।

বিশ শতকের শুরুতে, সাঁতরাগাছি এক বিরাট গ্রাম ছিল, যার একাংশ ছিলহাওড়া পুরসভার ভিতর। এক কিংবদন্তির বয়ান অনুযায়ী, ওই অঞ্চলে চৌধুরীরা হলেন বসবাসকারী প্রধান পরিবার, যারা বরেন্দ্র ব্রাহ্মণ ছিলেন, এখন থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে ওই জায়গায় বসবাস শুরু করেন। তাদের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্যান্য বরেন্দ্র পরিবারও সেই জায়গায় চলে এসেছিল।

সাঁতরাগাছি রেল স্টেশনের নামাঙ্কন হয়েছিল এই জায়গার নামেই, যদিও এই জায়গাটা অন্য একটা রেল স্টেশন রামরাজতলার কাছাকাছি। রামরাজতলা জায়গাটাকে এই গ্রামের অঞ্চলের এক-চতুর্থাংশ হিসেবে মনে করা হোত।সাঁতরাগাছিতেই ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সরকারি অনুদানের সহায়তায় হাওড়া জেলার স্থানীয় ভাষার বিদ্যালয়।

পরবর্তীকালে বিদ্যালয়টি "সাঁতরাগাছি মধ্য ইংরেজি স্কুল"-এর সঙ্গে সংযুক্ত হয় এবং একে একটা ইংরেজি ও বাংলা দ্বিভাষিক বিদ্যালয়রূপে তৈরি করা হয় এবং পরবর্তীতে ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে এই বিদ্যালয়কে সান্ত্রাগাছি কেদারনাথ ইনস্টিটিউশনে রূপান্তরিত করা হয়। হাওড়া জেলার প্রথম বালিকা বিদ্যালয়ও ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে ভারতীয় ব্যবস্থাপনায় সরকার থেকে সামান্য অনুদান পেয়ে সাঁতরাগাছিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

সাঁতরাগাছিতে উন্নত মানের ওল উৎপাদন হয়। এই অঞ্চলে নানা রকমের এমোরফোফালাস পাওনিফোলিয়াস রয়েছে। যার নাম অনুযায়ী এই জায়গাটার নামকরণ হয়েছে সাঁতরাগাছি।সাঁতরাগাছির অবস্থান ২২.৫৮০১৭° উত্তর ৮৮.২৬৯৬৩° পূর্ব।সাঁতরাগাছির চতুর্দিকে হাওড়ার অন্যান্য পার্শ্ববর্তী অঞ্চল হল - রামরাজাতলা, জগাছা, বাকসাড়া, উনষানি এবং গড়পা।

সাঁতরাগাছির দালাল পুকুর অঞ্চলে তিব্বতিবাবার আশ্রম আছে: তিব্বতিবাবা ছিলেন ভারতের একজন বাঙালি দার্শনিক সাধু। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে এই আশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তার ভক্ত ও শিষ্যেরা এই আশ্রমের নাম দিয়েছিল তিব্বতিবাবা বেদান্ত আশ্রম। আশ্রমের জন্যে জমিটা কিনেছিলেন বিষ্ণুপদ চট্টোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি। তিব্বতিবাবা নিজে আশ্রমের জন্যে প্রথম ইট গেঁথেছিলেন। কলকাতার এন্টালি অঞ্চলের একজন মানুষ পরবর্তীকালে আশ্রমের জন্যে আরও জমি কিনেছিলেন।

[ আরও পড়ুন চন্দননগর ]