জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ এর জীবনী

জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ Gyan Chandra Ghosh একজন বাঙালি রসায়নবিদ, শিক্ষক ও উদ্ভাবক।তিনি ভারতবর্ষে জ্ঞান ঘোষ আর ইউরোপে স্যার জি সি ঘোষ নামে পরিচিত ছিলেন।তিনি তার অমূল্য গবেষণা কর্ম, শিল্প ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার ও ভারতে প্রযুক্তি শিক্ষার বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ায় ১৮৯৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তার জন্ম। পিতা রামচন্দ্র ঘোষ।১৯০৯ সালে জ্ঞানচন্দ্র গিরিডি থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯১১ সালে চতুর্থ স্থান অধিকার করে আইএসসি ও কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯১৩ সালে রসায়ন শাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে বিএসসি এবং ১৯১৫ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমএসসি পাশ করেন।
তিনি আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ছাত্র ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও মেঘনাদ সাহার সতীর্থ ছিলেন। তিনি গাঢ় দ্রবণের মধ্যে লবণের অণুগুলি কীভাবে আয়নিত হয়ে বিদ্যুৎ পরিবহন করে— এই বিষয়ে মৌলিক গবেষণা করে ১৯১৮ সালে ডিএসসি উপাধি লাভ করেন।
এছাড়া জ্ঞানচন্দ্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি ও স্যার তারকনাথ পালিত স্কলারশিপ পান। তার এই গবেষণালব্ধ তত্ত্ব ‘ঘোষের আয়নবাদ’ নামে বিখ্যাত। বৃত্তি পেয়ে তিনি লণ্ডনে যান এবং সেখান থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
তার গবেষণা স্বনামধন্য বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্লাংক, উইলিয়াম হেনরি ব্র্যাগ, ভালগার নের্নস্ট প্রমুখ দ্বারা উচ্চ প্রসংশিত হয়। এমএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তাকে অধ্যাপকের পদ গ্রহণে আমন্ত্রণ জানান।
ফল প্রকাশের পর নবনির্মিত রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজে তিনি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ১৯২১ সালে নবগঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং দীর্ঘ কুড়ি বছর অধ্যাপনার সাথে নানা ধরনের গবেষণায় ব্যাপৃত ছিলেন। তার মধ্যে আলোক রসায়ন বা ফোটো কেমিস্ট্রি উল্লেখযোগ্য।
সাধারণ গ্যাস হতে ফিসার-ট্রপস পদ্ধতিতে অনুঘটকের উপস্থিতিতে তরল জ্বালানির উৎপাদন-বিষয়ে তার গবেষণা দেশ-বিদেশে সমাদৃত হয়। এই গবেষণা বিষয়ে তার রচিত গ্রন্থ হলো, সাম ক্যাটালাইটিক রিয়্যাকশন অফ ইন্ডাস্ট্রিয়ার ইমপরট্যান্স। ১৯৩৯ সালে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামনের পর বাঙ্গালোরেস্থিত তথা ইণ্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সর অধিকর্তাসহ ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতি হন।
ইণ্ডিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। ১৯৩৯ সাল থেকে দেশে নানা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫০ সালে ভারতের প্রথম আইআইটি খড়্গপুরের প্রথম ডিরেক্টর হন। ১৯৫৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন।
ভারতের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে শিক্ষা, বিজ্ঞান গবেষণা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে তিনি পরামর্শক ছিলেন। দেশ-বিদেশে বহু সম্মান লাভ করেন তিনি। ১৯৪৩ সালে তিনি নাইট উপাধিতে ভূষিত হন। ভারত সরকার তাকে ১৯৫৪ সালে পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত করে।১৯৫৯ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।