অমিতাভ রায়চৌধুরী এর জীবনী

অমিতাভ রায় চৌধুরী Amitabh Roychowdhury একজন ভারতীয় তাত্ত্বিক কণা পদার্থবিদ।তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের একজন সম্মানীয় অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবং আগে তিনি এই কলেজেই স্যার তারক নাথ পালিত চেয়ার প্রফেরসরশিপ সম্মান পেয়েছিলেন।
তিনি প্রখ্যাত ভারতীয় পদার্থবিদ অমল কুমার রায়চৌধুরীর ভাগ্নে। অমিতাভ রায়চৌধুরি ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৭ ই মার্চ ১৯৫২ সালে এবং সাউথ পয়েন্ট স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করেন এবং সেখান থেকে ১৯৭০ সালে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে ১৯৭৩ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
অস্কার ডব্লিউ গ্রিনবার্গের তত্ত্বাবধানে রায়চৌধুরী ১৯৭৭ সালে মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পার্ক থেকে কনা পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।অমিতাভ রায় চৌধুরী অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং মুম্বই -এর টাটা প্রাথমিক গবেষণা কেন্দ্রে তার ডক্টরেট পরবর্তী কাজ সম্পন্ন করার পর কলকাতার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-এর অন্তর্ভুক্ত রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজ -এ ১৯৮০ সালে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক পদে যোগদান করেন।
প্রথমে তিনি সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন অধ্যাপক ছিলেন কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি স্যার তারকনাথ পালিত অধ্যাপক সম্মানে সম্মানিত হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত থাকাকালীন তিনি সিইআরএন-এ বৈজ্ঞানিক সহযোগী ছিলেন। ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল অবধি তিনি লরেন্স বার্কলে পরীক্ষাগারে ঊর্ধ্বতন ইন্দো-মার্কিন ফুলব্রাইট ফেলো হিসাবে কাজ করেন।
১৯৯৪ সালে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়-এ সিনিয়র মেরি কুরি ফেলো হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৯৮ সালে তিনি তিনি ওকলাহোমা রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শক অধ্যাপক ছিলেন। ২০০৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি এলাহাবাদের হরিশ-চন্দ্র গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ছিলেন। এর পর তিনি আবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষদ হিসাবে যোগদান করেন।
অমিতাভ রায় চৌধুরী কণা পদার্থবিজ্ঞানের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করেছেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোয়ান্টাম ক্রোমো-গতিবিদ্যা, গ্র্যান্ড ইউনিফায়েড তত্ত্ব, ধ্রুপদী সমাধান, বাম-ডান প্রতিসাম্যতা, এফ সি এফ এন, অতি প্রতিসাম্যতা, নিউট্রিনো পদার্থবিদ্যা, অতিরিক্ত মাত্রা ইত্যাদি। তার অগ্রণী গবেষণাগুলির মধ্যে অন্যতম অতি প্রতিসাম্য মডেলের সিপি-ভায়োলেশন সম্পর্কিত গবেষণা,
অপেক্ষাকৃত কম শক্তিতে কি উপায়ে সমতা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব, নিউট্রিনো ভর এবং অতি প্রতিসাম্য মডেলের সাথে পদার্থবিদ্যার অন্যান্য মডেলের মিশ্রণ ইত্যাদি। এইসকল ক্ষেত্র ছাড়াও কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার ছাত্রদের মধ্যে তিনি একজন অতি পরিচিত এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষক।
১৯৮২ সালে ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান পরিষদ -এর পক্ষ থেকে তিনি তরুন বিজ্ঞানী হিসাবে পুরস্কৃত হন। ১৯৯৭ সালে পদার্থবিদ্যায় তার অগ্রণী কাজ ও ভূমিকার জন্য তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে শান্তি স্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার পেয়েছিলেন যা ভারতে সর্বোচ্চ বিজ্ঞান পুরস্কার হিসাবে বিবেচিত হয়। ১৯৬৭ সালে তিনি জগদীশ চন্দ্র বসু ফেলোশিপ পান।
সেই একই বছরে তিনি জাতীয় মেধা শংসাপত্র ও পুরস্কার এবং জাতীয় বিজ্ঞান প্রতিভা অনুসন্ধান শংসাপত্রে ভূষিত হন। তিনি ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান পরিষদ, জাতীয় বিজ্ঞান পরিষদ, এলাহাবাদ এবং বেঙ্গালুরুর বিজ্ঞান পরিষদের শাখা ইত্যাদি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ফেলো হিসাবে সংযুক্ত।
তিনি ইতালির ট্রিস্টে আবদুস সালাম নামক আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা প্রতিষ্ঠান -এর সাথে দুবছর ঊর্ধ্বতন সহযোগী হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। ২০০৫ সালে, রায়চৌধুরীকে মেরিল্যান্ড পূর্বতন ছাত্রসমিতি-এর পক্ষ থেকে থেকে বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক প্রাক্তন ছাত্র হিসাবে সম্মান দেওয়া হয়েছিল। তিনি গৌরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তার সম্মানসূচক কার্যের জন্য ডি.এস.সি. উপাধি পান।