মাজুলী দ্বীপ এর ইতিহাস

মাজুলী ভারতের অসমের ব্রহ্মপুত্র নদীর মধ্যে থাকা বিশ্বের সর্ববৃহৎ নদীদ্বীপ এবং অসমের নবগঠিত জেলা। ২৭ জুন ২০১৬ সালে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোণোয়াল মাজুলীকে জেলা ঘোষণা করায় মাজুলী ভারতের প্রথম নদীদ্বীপ জেলা হয় আর অসমের মোট জেলার সংখ্যা হয় ৩৩।আগে এটি যোরহাট জেলার একটা মহকুমা ছিল।
মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শংকরদেব এবং মাধবদেবের উদ্যোগের সত্রসমূহ নিয়ে এটি মহাপুরুষীয়া বৈষ্ণবধর্ম ও সত্রীয়া সংস্কৃতির পীঠকেন্দ্র। মাজুলীকে 'সত্র নগরী' বলেও ডাকা হয়। আগে মাজুলীর মোট আয়তন ১২৫০ বর্গমাইল ছিল, কিন্তু খননের ফলে ২০০১ সালে এর ক্ষেত্রফল হয় ১৬৩ বর্গমাইল। একে ঘিরে থাকা নদীর বিস্তৃতি বেড়ে আসার সাথে মাজুলীর সংকোচন হয়েছে।
দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদী ও উত্তরে শোবনশিরি নদীর মিলন হয়ে এই দ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে। যোরহাট থেকে ফেরীর সাহায্যে জলপথে মাজুলিতে যাতায়ত করার ব্যবস্থা আছে। মাজুলী দ্বীপ অসমের রাজধানী গুয়াহাটি থেকে প্রায় ২০০ দূরত্বে অবস্থিত।
নদী দ্বীপের সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে এই স্থান মাজালী বা মজালী নামে পরিচিত ছিল। নকুল চন্দ্র ভুইয়ার ইতিহাস মতে, আহোম রাজা জয়ধ্বজ সিংহের সময় এই দ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়ছে।
অতুল চন্দ্র হাজরিকার মতে, মা+জুলী নাম একত্রিত হয়ে মাজুলী নামের উৎপত্তি হয়েছে। এখানে মা অর্থে লক্ষ্মী ও অসমীয়া ভাষায় জুলী অর্থ ভাণ্ডার। একসময়ে এই দ্বীপ শস্য ও মাছে পরিপূর্ণ থাকায় মাজুলী নামকরণ হয়েছে। ড. জে পি ওয়েড অষ্টাদশ শতকে মাজুলী শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। এর দৈর্ঘ ১৬০ এবং প্রস্থ ৬০ ব্রিটিশ মাইল বলেও ওয়েড উল্লেখ করে গেছেন। Gazetter of Bengal and North East India-র তথ্য মতে, ১৯০১ খ্রীষ্টাব্দে মাজুলীর আয়তন ছিল ৪৮৫ বর্গমাইল।
মাজুলীতে সারা বৎসর মৌসুমী জলবায়ু প্রবাহিত হয়। জলবায়ু বিজ্ঞানীর মতে এই অঞ্চল উপক্রান্তীয় জলবায়ুর অন্তর্গত। শীতকালে বৃষ্টি ও তাপের মাত্রা কম হওয়ার জন্য এই অঞ্চলে শীতের প্রকোপ বেশি। গ্রীষ্মকালে মাজুলীর তাপমাত্রা ২০-৩৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস ও শীতকালে১০-১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস হয়। নিয়মীত মৌসুমী বায়ুপ্রবাহের ফলে মাজুলীতে ২০০ থেকে ৩০০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়।
মাজুলী ২৬° ৪৮′ থেকে ২৭° ১২′ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯৩° ৩৯′ থেকে ৯৪° ৩৫′ দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত অসমের যোরহাট জেলার উত্তর দিকে মাজুলী অবস্থিত। মাজুলীর সমতলভূমির আকার একটা শিলিখা ফলের মত। একসময় মাজুলীর ভৌগোলিক ক্ষেত্রফল ১২৫০ বর্গ কিলোমিটার ছিল যদিও ব্রহ্মপুত্রের খনননে এই মাজুলীর ভূখণ্ড সংকীর্ণ হয়ে ২০১২ সালে ৫০৮°১৩ বর্গ কিলোমিটার হয়ে গেছে।এর উত্তর দিকে লখিমপুর জেলা ও ধেমাজি জেলা, দক্ষিণে যোরহাট, পূর্বে শিবসাগর জেলা এবং পশ্চিমে গোলাঘাট জেলা ও শোণিতপুর জেলা।