কাছাড় জেলা এর ইতিহাস

কাছাড় জেলা, ভারতের উত্তরপূর্বে অবস্থিত আসাম রাজ্যের একটি জেলা। এই জেলাটির সদর শিলচর শহরে রয়েছে। ঐতিহাসিকদের মতে জেলাটি দক্ষিণ ডিমাসার হিড়িম্ব রাজ্যের অংশ ছিল। কাছাড় জেলার আয়তন ৩৭৮৬ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ২০১১ এর জনগণনা অনুযায়ী ১,৭৩৬,৩৯১। বাংলা ভাষা এই জেলায় সরকারী ভাষা হিসাবে স্বীকৃত।
কাছাড়ের সদর শহর শিলচর আসামের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র। এই জেলার একমাত্র বিমানবন্দর শিলচরে অবস্থিত। শিলচরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি ভারতের অন্যতম সেরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। বরাক নদী এই অঞ্চলের প্রধান নদী। কাছাড় সহ করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলা নিয়ে গঠিক দক্ষিণ আসামের বরাক উপত্যকা বিভাগ। দেশভাগের পূর্বে এটি বৃহত্তর সিলেটের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
কাছাড় নামটি একটি ডিমাসা শব্দ "কাছাড়ি" থেকে এসেছে। কাছাড়ের মুল ইতিহাস কাছাড়ি রাজ্য স্থাপনের সময় থেকে শুরু হয়। জেলাটিতে একটি নগর এবং দুটি ছোট শহর রয়েছ, এগুলি হলো যথাক্রমে- শিলচর, লক্ষীপুর এবং সোনাই।কাছাড়ি রাজারা নিজেদের 'হেড়ম্বের প্রভু' বলে মনে করতো। এই কারণেই অনুমান করা হয় যে, কাছাড়ি রাজ্যের পুরানো নাম হেড়ম্ব ছিল এবং ডিমাপুরের নামও এই হেড়ম্বপুর নামের অপভ্রংশ।
হিন্দু মহাকাব্য মহাভারতে উল্লেখযোগ্যভাবে হেড়ম্ব বা হিড়িম্ব রক্ষকুলের ও তার রাজত্বের বর্ণনা দেওয়া রয়েছে এবং তার ভগিনী হিড়িম্বার সাথে দ্বিতীয় পাণ্ডব ভীমের বিবাহ ও তাদের পুত্র ঘটোৎকচের কাহিনী বর্ণিত আছে। কাছাড় এবং ডিমা হাসাওয়ের কাছাড়িরা নিজেদের বোড়ো যাযাবর জাতির একটি অংশ বলে মনে করেন।
ইয়াং সিকিয়াং নদীর উচ্চ অংশে জনপ্রিয় ও ক্ষমতাদখলের প্রতিযোগীতার ফলে তারা আসামে নেমে আসে এবং ত্রিপুরা রাজ্যের সন্নিকটে নিজেদের রাজ্য স্থাপন করে।১৭ই আগস্ট ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে সিলেট জেলার সাড়েতিনটি থানা করিমগঞ্জ মহকুমারূপে ভারতের কাছাড় জেলাতে যুক্ত হয়। ১৯৮৩ তে জুলাই মাস পূর্বতন কাছাড় জেলা থেকে করিমগঞ্জ মহকুমা জেলাতে উন্নীত হয়।
আবার ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে কাছাড় জেলা থেকে নতুন হাইলাকান্দি জেলা ও কাছাড় জেলা তেরী করা হয়। আবার ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে কাছাড় থেকে পৃৃথক করা জিরিবাম অঞ্চলটি ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে একটি নতুন ক্ষুদ্র জেলার মর্যাদা পায়।কাছাড় জেলাটির উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে জেলাটির কেন্দ্র ও পশ্চিমভাগের সমতলভুমি অবধি ভূপ্রকৃৃতির তারতম্য লক্ষনীয়।
জল জমে থাকার কারণে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে সমগ্র জেলার ২০% জমিতে কৃৃষিকাজ সম্ভব নয়। আবার নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাসে বৃষ্টির অভাবে চাষজমিতে ক্ষরা দেখা যায়। মাটি ছিদ্রযুক্ত ফলে আর্দ্রতা ধারণক্ষমতা কম ফলে ভূমিক্ষয়প্রবণ। জেলাটির জলস্তর কম। কাছাড়ের প্রধান নদী বরাক নদী যা বড়বক্র নামেও পরিচিত। নদীটির একাধিক ছোটো উপনদী রয়েছে যা উত্তর ও দক্ষিণের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে এসে মিলিত হয়েছে। বরাক নদী জেলাটির অভ্যন্তরে পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত এবং সাম মণিপুর সীমানা নির্ধারণ করেছে। বার্ষিক গড় বৃৃষ্টিপাত ৩০০০ মিলিমিটারের বেশি।