বর্ধমান জেলার বড়বেলুন এর মা কালীর ইতিহাস

বর্ধমান জেলার বড়বেলুন এর মা কালীর ইতিহাস

দূর্গা পূজা এর পরে কালী পূজা হয়।বহু জায়গায় এই পুজো অনুষ্ঠিত হলেও বড়বেলুনের মাকে দেখার জন্য অনেক মানুষ ভিড় করে। ৭০০ বছর আগে স্থাপিত হয়েছিল মা বড়মায়ের মন্দির। সাধক ভৃগুরাম স্বামী মায়ের মন্দিরের স্থাপন করেছিলের। বড়বেলুন গ্রাম, যা বর্ধমান জেলার একটি প্রাচীনতম গ্রাম হিসাবে পরিচিত। এই গ্রামের আগে নাম ছিল বিল্বপত্তন, বিল্বপত্তন থেকে নাম হয়েছে বেলুন, বেলুন থেকে বড়বেলুন।

এই বড়বেলুন গ্রামে যেখানে এখন মানুষ বসবাস করে সেই জায়গায় আগে মহাশ্মশান ছিল। কোনো মানুষ সেখানে বাস করতেন না।বড়বেলুন ভট্টাচার্য্য বংশের আদিবাস, মন্দির স্থাপয়িতা শক্তিপীঠের মহানুভব মহাসাধক স্বামী ভৃগুরাম বিদ্যাবাগীশ মহাশয় ৫১ সতীপীঠের মধ্যে কেতুগ্রামে বকুলা নদীতীরে মরাঘাটে "বহুলাপীঠ" এ তপস্যায় নিমগ্ন ছিলেন।

তপস্যারত থাকা অবস্থায় তিনি স্বপ্নাদেশ পান, তিনি যেন বড়বেলুন গ্রামের মহাশ্মশানে এসে "পঞ্চমুণ্ডী" আসন স্থাপন করেন। তিনি মায়ের আদেশানুসারে এই গ্রামে এসে পঞ্চমুণ্ডী আসন স্থাপন করেন। এই স্থান উপপীঠ "শক্তিপীঠ" নামে অভিহিত। একসময় সিদ্ধিলাভের জন্য বহু বিভূতি এই স্থানে প্রদর্শন করতেন। ভৃগুরাম স্বামী নিজের হাতে মায়ে একটি ছোটো মূর্তি স্থাপন করে পূজা-অর্চনা করতেন।

তিনি পঞ্চমুণ্ডি আসনে বসে যোগাসন করতেন। তার এই গ্রামে পরিচয় ছিল "বুড়ো গোঁসাই" নামে। খুব সাধারন ভাবেই কাটাতেন তিনি দিন কাল, তার প্রতিবেশী ছিল ভূত, পেত্নী, শকুন ও শৃগাল। তিনি একদিন মায়ের মূর্তি গড়ে স্নান করতে গেলেন, স্নান সেরে ফিরে আসার পর দেখে যে বেদীর ওপর মায়ের মূর্তি স্থাপন করেছিলেন সেই বেদী নেই, তালপাতার ছাউনি ভেঙে গেছে।

দাঁড়িয়ে আছে সেখানে বিশালাকার ভীষন বদনা মূর্তি। ভৃগুরাম ভয়ে মাতৃ স্তব করতে লাগলেন, এবং সেখান থেকে চলে যেতে চাইলেন। সেই সময় অভয় দিয়ে মা তাকে বলেন, ওরে পুত্র ভৃগুরাম এই মূর্তি থাকবে আমার "বুড়ীমাতা" নাম। তার পর থেকে ভৃগুরাম সেই ভীষনা মূর্তি পূজা করতে লাগলেন। এবার আসতে আসতে ভৃগুরাম বয়স্ক হচ্ছেন, তাহার যখন ৯৫ বৎসর বয়স তিনি মা বড়মায়ের স্বপ্নাদেশ পান -মা তাহাকে বলেন তুই মারা গেলে আমার পূজা অর্চনা কে করবে!!

তাই তুই বিবাহ কর, তুই বিবাহ করলে তোর পুত্ররা বংশগত ভাবে আমার পূজা করবে। মা তাকে বলেন এই বিল্বপত্তন গ্রামের রাজা নারায়ন চন্দ্র রায়ের একমাত্র গুরুকন্যা অমাবস্যাতিথিতে সর্পাঘাতে মারা যাবে, তার মুখে একমুঠো চিতাভষ্ম দিয়ে জীবন দান করিয়া তাঁহাকে বিবাহ করবি। মায়ের কথা মতো অমাবস্যা দিন সর্পাঘাতের মারা যাওয়া ব্রাহ্মণ কন্যাকে শ্মশানে দাহন করার জন্য আনলে, ভৃগুরাম তাহাকে অবাক হয়ে দেখেন, দেখেন মায়ের মহিমা।

তারপর মায়ের আদেশ মতো একমুঠো চিতাভষ্ম মেয়েটি মুখে দিতেই মায়ের আশিষে মেয়েটি বেঁচে উঠলেন। তারপর ভৃগুরাম তার পরিবারে সব ঘটনা বললেন এবং ওই ব্রাহ্মণ কন্যাকে বিবাহ করেন। এরপর তাহার তিন পুত্র হয়। নাম ছিল শিবচরন ন্যায়ালঙ্কার, শঙ্কর প্রসাদ বেদান্তবাগীশ ও গোবর্দ্ধন চুড়ামণি, ডাক নাম ছিল নেঙ্গুর, ভেঙ্গুর ও পীতাম্বর।

ভৃগুরামের বয়স যখন ১৩৫ বৎসর তখন মায়ের স্বপ্নাদেশ পান এবার তাকে জগৎ সংসার ছাড়তে হবে, তাই মাকে তার পুত্র দের হাতে তুলে দিতে হবে। ভৃগুরাম খুশি হয়ে তার পুত্রদের ডাকলেন এবং সব কথা বললেন। তারপর কিছু দিনের মধ্যে তিনি গত হলেন। তার পুত্রদের মধ্যে শিবচরন ন্যায়ালঙ্কার বিয়ে করেছিলেন তাই তার বংশ পরম্পরায় মায়ের সেবা করে আসছেন। এবার কালীপুজো দেখতে বড়বেলুনে মায়ের মন্দিরে যেতে পারেন।