জম্মু শহরের প্রতিষ্ঠার কাহিনী

জম্মু হচ্ছে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মিরের শীতকালীন রাজধানী। এছাড়াও এটি উক্ত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জম্মু জেলার সদর দপ্তর এবং বৃহত্তম শহর। জম্মু শহর তাওয়ি নদীর তীরে অবস্থিত। এই শহরটি ২৪০ কিমি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। জম্মু শহরটি উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা এবং দক্ষিণে সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমির উত্তরাংশ দ্বারা বেষ্টিত।
জম্মু হচ্ছে উক্ত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দ্বিতীয় জনবহুল শহর। শহরটিতে এপর্যন্ত দুটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। প্রথমবার ১৭১২ সালে এবং দ্বিতীয়বার ১৮০৮ সালে যুদ্ধ সংঘটিত হয়।প্রাচীন মন্দির ও হিন্দু মঠের জন্য জম্মু শহরটি উত্তর ভারতের মন্দিরের শহর হিসাবে পরিচিত। তাই শহরটি উক্ত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান। জম্মু জেলার অন্তর্ভূক্ত হলেও প্রতিবেশী সাম্বা জেলার সাথে এই শহরের সীমানা রয়েছে।
স্থানীয় ঐতিহ্য অনুসারে, জম্মুর নামকরণ করা হয়েছে এর প্রতিষ্ঠাতা রাজা জাম্বুলোচনের নামে। তিনি নবম শতাব্দীতে এই এলাকা শাসন করেছিলেন বলে মনে করা হয়। স্থানীয় ঐতিহ্য শহরটিকে ৩০০০ বছরের পুরানো বলে মনে করে। তবে এই দাবি ঐতিহাসিকদের দ্বারা সমর্থিত নয়।জম্মুতে অবস্থানের স্থানাঙ্ক ৩২.৭৩° উত্তর ৭৪.৮৭° পূর্ব। শহরটির গড় উচ্চতা ৩০০ মি।
জম্মু শহর শিবালিক পাহাড়ে কম উচ্চতার অসম চূড়ায় অবস্থিত। এটি উত্তর, পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্বে শিবালিক রেঞ্জ দ্বারা বেষ্টিত এবং উত্তর-পশ্চিমে ত্রিকুটা রেঞ্জ এটিকে ঘিরে রয়েছে। এটি ভারতের জাতীয় রাজধানী অঞ্চল নতুন দিল্লি থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।শহরটি তাউই নদীর চারপাশে ছড়িয়ে আছে।
পুরানো শহরটি উত্তর দিক থেকে নদীটিকে উপেক্ষা করে এবং শহরের নতুন এলাকাগুলো নদীর দক্ষিণ দিকে চারপাশে ছড়িয়ে গিয়েছে। নদীটির ওপর মোট পাঁচটি সেতু রয়েছে। শহরটি কয়েকটি পর্বতশৃঙ্গের উপর নির্মিত।তারিখ-ই-আজমির মতে, জম্মু ৯০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে অস্তিত্ব লাভ করে। ডুর্গার রাজ্য এই সময়ের কাছাকাছি সময়ের বলে প্রমাণিত হয়। সেই সময়ে ডুর্গার রাজ্যের রাজধানী ছিল ভাল্লাপুরা বলে মনে করা হয়।
কালহানের রাজতরঙ্গিনীতে এর শাসকদের বেশ কয়েক বার উল্লেখ করা হয়েছে। বব্বাপুরা হল রাজতরঙ্গিনীতে উল্লিখিত আরেকটি রাজ্য, যার কিছু শাসক পরবর্তী জম্মু শাসকদের বংশাবলীতে পাওয়া যায়। সেসময় এই শাসকেরা প্রায় স্বাধীন মর্যাদা উপভোগ করেছিলেন এবং দিল্লির সুলতানদের সাথে নিজেদের মিত্রতা করেছিলেন বলে মনে করা হয়। রাজা ভীম দেবকে দিল্লির ক্রনিকলস-এ মুবারা শাহ এর সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তৈমুরের ইতিহাসে জম্মুর নাম উল্লেখ আছে। তিনি ১৩৯৮ সালে দিল্লি আক্রমণ করেন এবং জম্মু হয়ে সমরকন্দে ফিরে আসেন। ১৬ শতকের গোড়ার দিকে বাবরের সময়ের মুঘল ইতিহাসে জম্মুকে পাঞ্জাব পাহাড়ের একটি শক্তিশালী রাজ্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি মানহাস রাজপুতদের দ্বারা শাসিত ছিল বলে জানা যায়।
পরবর্তীতে সম্রাট আকবর এই অঞ্চলের পার্বত্য রাজ্যগুলোকে মুঘল আধিপত্যের অধীনে নিয়ে আসেন। তবে সেসময় এখানকার স্থানীয় রাজারা যথেষ্ট রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন উপভোগ করতেন। জম্মু ছাড়াও এই অঞ্চলের অন্যান্য রাজ্য যেমন কিশতওয়ার এবং রাজৌরির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে মুঘল সাম্রাজ্য এই পার্বত্য প্রধানদের সাথে সাম্রাজ্যের মিত্র এবং অংশীদার হিসাবে আচরণ করেছিল।