স্কুলে স্থায়ী-অস্থায়ী শিক্ষকদের মধ্যে বেতন বৈষম্য কেন? প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি

আবারও বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। আবারও স্কুল মামলা ঘিরে এক মানবিক নির্দেশ। মহার্ঘভাতা প্রাপক রাজ্যের স্কুলগুলো নিয়ে নয়া ভাবনাচিন্তা বিচারপতির। বেতন বৈষম্য কাটাতে মানবিক উদ্যোগ বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের। কলকাতাতেই প্রায় ৩ ডজন কাছাকাছি ডিএ প্রাপক স্কুল রয়েছে। সারা রাজ্যে সংখ্যাটা হবে ৪.৫ ডজনের বেশি।
কলকাতার বড়বাজারের এক স্কুলকে দিয়ে যার সূচনা। আদালত কৈফিয়ত তলবের মধ্য দিয়ে বেতন বৈষম্যের গোড়ায় পৌঁছতে চাইছে। স্কুলের স্থায়ী এবং অস্থায়ী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে বেতন বৈষম্য এত কেন বেশি হবে এই প্রশ্ন বুধবার তুললেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। শ্রী জৈন সেতাম্বর তেরাপন্থী স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি সম্পাদক এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এজলাসে হাজির হন বুধবার।
বিচারপতির প্রশ্নের উত্তরে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায় স্কুল প্রায় ৯৫০ স্টুডেন্ট আর সব নিয়ে শিক্ষক ২৭ জন। ২৭ শিক্ষকের মধ্যে স্থায়ী শিক্ষক মাত্র ৭ জন। বাকি কুড়িজন শিক্ষক-শিক্ষিকার সবাই অস্থায়ী। স্থায়ী শিক্ষকরা সরকারি বেতন ক্রমের বেতন পেলে, অস্থায়ী শিক্ষকদের বেতন কেন ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার মধ্যে হবে। সম পরিমাণ কাজে শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিয়ে বিচলিত বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। কলকাতা জেলা স্কুল পরিদর্শক'কে (ডিআই) এই মর্মে বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
চার সপ্তাহের মধ্যে স্কুল পরিদর্শন করে কলকাতা হাইকোর্টে বিশদ রিপোর্ট দেবেন ডি আই। ছাত্র ছাত্রী, শিক্ষক বা শিক্ষিকা কতজন। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে কতজন স্থায়ী কতজন অস্থায়ী। কর্মচারীদের মধ্যে স্থায়ী বা অস্থায়ী সংখ্যা কত। কাদের কেমন বেতন। অন্যান্য সুযোগ সুবিধা কেমন। এইসব নিয়ে বিশদ রিপোর্ট দিতে হবে।
আইনজীবী অঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, তাঁর মক্কেল ওই স্কুলের শিক্ষক উমেশ সিংয়ের চাকরি বাতিল করা যাবে না আদালতের অনুমতি ছাড়া এটাও পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিচারপতি। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ফের মামলার শুনানি। প্রসঙ্গত বড়বাজারের শ্রী জৈন শ্বেতাম্বর তেরাপন্থী স্কুলের মামলায় বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন কলকাতা পুলিশের অন্তর্গত বড়বাজার থানার ওসি স্কুলের তিন পদাধিকারীকে এজলাসে হাজির করাতে হবে।
নির্দেশ মেনে স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি, সম্পাদক এবং স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ৪ মে সকাল সাড়ে দশটায় বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে হাজির হন। সাম্প্রতিক সময়ে কলকাতার কোনও স্কুলের প্রধানদের পুলিশ আদালতে হাজির করছে এমন উদাহরন নেই। রিষড়ার বাসিন্দা উমেশ সিং।
২০০৭ সাল থেকে শিক্ষকতা করেন বড় বাজারের এই স্কুলে। ইতিহাসের শিক্ষকতা করেন তিনি দশম শ্রেণন পর্যন্ত ক্লাস নেন নিয়মিত। এখনও পর্যন্ত তাঁর ক্লাস নেওয়ার কোনও ফাঁকি নেই। ২০১৭ এবং ২০২০ সালের ঘটনার ঘনঘটায় কিছুটা দিশেহারা এই শিক্ষক। ২০১৭ স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর চাকরি পাকা হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।
সেই সময়ে কলকাতা হাইকোর্টে তিনি মামলা করেন এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের কাছ থেকে অনুমোদন চেয়ে আবেদন রাখেন আদালতের কাছে। হাইকোর্ট তাঁর আবেদনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরকে বিবেচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে বলে। ২০২১ সালে এসে ডিআই, কলকাতা শুনানির পর ওই শিক্ষকের অনুমোদন বাতিল করে।