শিব পূজার মন্ত্র

পূজাসামগ্রী ও সাধারণ নিয়মকানুন এই জিনিসগুলি সাজিয়ে নিয়ে পূজা করতে বসবেন — ১। একটি শিবলিঙ্গ। ২। একটি ছোটো ঘটিতে স্নান করানোর জল। ৩। একটি থালা, একটি গ্লাস ও কোশাকুশি। কোশাকুশি না থাকলে তামা বা পিতলের সাধারণ ছোটো পাত্র ব্যবহার করবেন। ৪। একটু সাদা চন্দন। ৫। একটুখানি আতপ চাল। ৬। কয়েকটি ফুল ও দুটি বেলপাতা। ৭। ধূপ, দীপ। ৮। নৈবেদ্য ও পানীয় জল (আপনার সাধ্য ও ইচ্ছামতো দেবেন। একটা বাতাসা হলেও চলবে।)
৯। প্রণামী (অন্তত একটি টাকা দেবেন। ইচ্ছা করলে বেশিও দিতে পারেন।) ১০। একটি ঘণ্টা। উপচার সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞাতব্য হল এই যে, চন্দন, ফুল-বেলপাতা, ধূপ, দীপ ও নৈবেদ্য এই পঞ্চোপচার পূজার ক্ষেত্রে অপরিহার্য্য। কোনো একটি উপচারের অভাব ঘটলে, সেই উপচারের নাম করে একটু জল দিলেও চলবে। আপনার প্রকৃত ভক্তিই সেই অভাব পূর্ণ করবে, এই কথা জানবেন। শিবপূজা সর্বদা উত্তরমুখে বসে করবেন এবং শিবলিঙ্গকেও উত্তরমুখী করে রাখবেন। উত্তরদিক ব্রহ্মলোকপথ। তাই পরমব্রহ্মময় শিবের পূজা সর্বদা উত্তরমুখে বসে করাই নিয়ম। শিবলিঙ্গকে তামা বা পাথরের পাত্রে বসানো হয়ে থাকে।
প্রথমে স্নান ও গুরুনির্দেশিত উপাসনাদি সেরে আসনে বসে শিব ও দুর্গাকে প্রণাম করবেন। তারপর শ্রীগুরু ও ইষ্টদেবতাকে স্মরণ করে ইষ্টমন্ত্র যথাশক্তি জপ করবেন। অদীক্ষিত ও বালকবালিকারা শুধু স্নান সেরে শিবদুর্গাকে প্রণাম করে বসবেন। পূজাস্থান আগেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ধূপদীপ জ্বালিয়ে নেবেন। তারপর নারায়ণকে মনে মনে নমস্কার করে পূজা শুরু করবেন।
এরপর হাত জোড় করে বলবেন ওঁ সূর্যঃ সোমো যমঃ কালঃ সন্ধ্যে ভূতান্যহঃ ক্ষপা। পবনো দিক্পতির্ভূমিরাকাশং খচরামরাঃ। ব্রাহ্মং শাসনমাস্থায় কল্পধ্বমিহ সন্নিধিম্।। এরপর জলশুদ্ধি করে নেবেন। জলশুদ্ধির মাধ্যমে সূর্যমণ্ডল থেকে সকল তীর্থকে জলে আহ্বান করে জলকে পবিত্র করা হয়। তারপর সেই পবিত্র জলে পূজার কাজ হয়। ঠাকুরের সামনে নিজের বাঁ হাতের কাছে কোশা রেখে তাতে জল দেবেন। সেই জলে আলতো করে ডান হাতের মধ্যমা আঙুল ঠেকিয়ে (নখ যেন না ঠেকে) বলবেন— ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতি। নর্মদে সিন্ধু-কাবেরি জলেঽস্মিন সন্নিধিং কুরু। তারপর সেই জলে একটা সচন্দনফুল দিয়ে মনে মনে তীর্থদেবতাদের পূজা করবেন। এতে সকল তীর্থের পূজা করা হয়ে যায়। তীর্থপূজা সেরে নিয়ে সেই জল নিজের মাথায় একটু দেবেন। তারপর পূজার সকল দ্রব্যে ছিটিয়ে সব কিছু শুদ্ধ করে নেবেন। তারপর সূর্যের উদ্দ্যেশ্যে একটু জল শিবলিঙ্গে দেবেন।
সূর্যকে জল দিয়ে সূর্যপ্রণাম করবেন— ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্। ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোঽস্মি দিবাকরম্।। তারপর একে একে গণেশ, শ্রীগুরু, শিব, সূর্য, নারায়ণ, দুর্গা, নবগ্রহ, দশমহাবিদ্যা, দশাবতার, সর্বদেবদেবী ও আপনার ঠাকুরের আসনে অন্যান্য ঠাকুরদেবতা থাকলে তাঁদেরকে এবং আপনার ইষ্টদেবতাকে প্রত্যেককে একটি করে সচন্দন ফুল দিয়ে পূজা করবেন। অত ফুল না থাকলে প্রত্যেকে নামে জলশুদ্ধির জল একটু করে শিবলিঙ্গে দেবেন। শিবলিঙ্গে সব দেবদেবীর পূজা হয়, তাই কোনো দেবতার ছবি বা মূর্তি আপনার কাছে না থাকলে তাঁর বা তাঁদের পূজা শিবলিঙ্গেই করতে পারেন। তারপর শিবঠাকুরকে স্নান করাবেন। একঘটি জল নেবেন। তাতে জলশুদ্ধির জল একটু মিশিয়ে নিতে পারেন বা জলশুদ্ধির পদ্ধতিতে সেই জলটিকেও শুদ্ধ করে নিতে পারেন। তারপর স্নানের মন্ত্রটি পড়ে বাঁ হাতে ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে স্নান করাবেন।
স্নানের মন্ত্রটি হল—
ওঁ ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্।
উর্বারুকমিব বন্ধনান্মৃত্যোর্মুক্ষীয় মাঽমৃতাৎ।।
ওঁ তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমহি তন্নো রুদ্রঃ প্রচোদয়াৎ ওঁ।
স্নান করিয়ে শিবের ধ্যান করবেন (ধ্যানের মন্ত্রটি বঙ্গানুবাদ সহ শেষে দেওয়া আছে) চোখ বন্ধ করে শিবের রূপটি চিন্তা করতে করতে ধ্যানমন্ত্রটি স্মরণ করে ধ্যান করতে পারেন। মন্ত্রটি মুখস্ত না থাকলে, প্রথমে একবার পাঠ করে নিয়ে চোখ বুজে শিবের রূপ ধ্যান করবেন। এইভাবে কয়েক বার করলেই মন্ত্র মুখস্ত হয়ে যাবে, তখন আর মন্ত্রপাঠ না করলেও চলবে। ধ্যানের সময় ভাববেন, আপনি চন্দন, ফুল, বেলপাতা, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য দিয়ে সাক্ষাৎ শিবের পূজা করছেন। শিবঠাকুরও প্রসন্ন হয়ে আপনার পূজা নিচ্ছেন।
এইভাবে কিছুক্ষণ ধ্যান করে পঞ্চোপচারে পূজা করবেন। প্রথমে একটি ফুলে চন্দন মাখিয়ে গন্ধদ্রব্য