শওকত আলী এর জীবনী

শওকত আলী এর জীবনী

শওকত আলী Shawkat Ali  একজন বাঙালি কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও শিক্ষক। তিনি বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে গল্প ও উপন্যাস লিখে খ্যাতি অর্জন করেন।ভিন্নধর্মী লেখার জন্য তাঁর পাঠক সমাজও ভিন্নরকম ছিল। ১৯৯০ সালে সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে।

শওকত আলী ১৯৩৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর দিনাজপুর জেলার থানা শহর রায়গঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাঃ খোরশেদ আলী সরকার এবং মাতার নাম সালেমা খাতুন। শওকত আলী ছিলেন তাদের তৃতীয় সন্তান।তার ছোটভাই বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রচ্ছদশিল্পী আবদুর রোউফ সরকার।

শ্রীরামপুর মিশনারী স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির মাধ্যমে শওকত আলীর বাল্য শিক্ষা শুরু হয়। কিন্তু ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে কলকাতাতে আক্রমণ শুরু হলে তারা স্বপরিবারে রায়গঞ্জে ফিরে আসেন। রায়গঞ্জে তার মা সেখানকার বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন এবং বাবা ডাক্তারি পেশা শুরু করেন।

রায়গঞ্জ করনেশন ইংলিশ হাইস্কুলে শওকত আলীকে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি করে দেওয়া হয়। ১৯৫১ সালে তিনি করনেশন স্কুল থেকেই প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫১ সালে তিনি দিনাজপুরের সুরন্দ্রনাথ কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন।১৯৫৫ সালে বিভিন্ন পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হতে শুরু করে। একই সময়ে দৈনিক মিল্লাত পত্রিকার নিউজ ডেস্কে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন।

১৯৫৮ সালে দিনাজপুরের একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে এবং ১৯৫৯ সালে ঠাকুরগাঁও কলেজে বাংলার প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন তৎকালীন জগন্নাথ কলেজে এবং ১৯৮৮ সালে জেলা গেজেটিয়ারের ঢাকার হেড অফিসে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করে পরিচালক পদে উন্নীত হন। ১৯৮৯ সালে সরকারি সঙ্গীত কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৯৩ সালে অবসরগ্রহণ করেন।

নবম শ্রেণীতে পড়াবস্থায় লেখালেখি শুরু করলেও ভারত ভাগের পর কলকাতার বামপন্থীদের 'নতুন সাহিত্য' নামে একটি পত্রিকায় প্রথম তার গল্প প্রকাশিত হয়। এরপর দৈনিক মিল্লাত, মাসিক সমকাল, ইত্তেফাকে তার অনেক গল্প, কবিতা এবং শিশুদের জন্য লেখা প্রকাশিত হয়। তার দক্ষিণায়নের দিন, কুলায় কালস্রোত এবং পূর্বরাত্রি পূর্বদিন যেগুলোকে ত্রয়ী উপন্যাস বলা হয়, যার জন্য তিনি ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।

তার লেখা কয়েকটি বিখ্যাত গ্ৰন্থ হল- পিঙ্গল আকাশ,যাত্রা,প্রদোষে প্রাকৃতজন,অপেক্ষা,দক্ষিণায়নের দিন,কুলায় কালস্রোত, পূর্বরাত্রি পূর্বদিন,সম্বল,গন্তব্যে অতঃপর,ভালোবাসা কারে কয়।২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।