শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর জীবনী

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর জীবনী

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একজন বাঙালি লেখক, ঔপন্যাসিক, ও গল্পকার। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় এবং বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক। তার অনেক উপন্যাস ভারতবর্ষের প্রধান ভাষাগুলোতে অনূদিত হয়েছে। বড়দিদি (১৯১৩), পরিণীতা (১৯১৪), পল্লীসমাজ (১৯১৬), দেবদাস (১৯১৭), চরিত্রহীন (১৯১৭), শ্রীকান্ত (চারখণ্ডে ১৯১৭-১৯৩৩), দত্তা (১৯১৮), গৃহদাহ (১৯২০), পথের দাবী (১৯২৬), শেষ প্রশ্ন (১৯৩১) ইত্যাদি শরৎচন্দ্র রচিত বিখ্যাত উপন্যাস। 

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অপ্রতিদ্বন্দ্বী জনপ্রিয়তার দরুন তিনি 'অপরাজেয় কথাশিল্পী' নামে খ্যাত। তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে জগত্তারিণী স্বর্ণপদক পান।এছাড়াও, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে 'ডিলিট' উপাধি পান ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে।হুগলী জেলার অন্তর্গত দেবানন্দপুর গ্রামে বাংলা ১২৮৩ সনের ৩১ শে ভাদ্র , ইংরেজি ১৮৭৬ খ্রীষ্টাব্দের ১৫ ই সেপ্টেম্বর আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথা সাহিত্যিক বাংলা সাহিত্যের অপরাজেয় কথা শিল্পী শরৎচন্দ্রের জন্ম হয়। 

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পিতার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায় , মায়ের নাম ভুবনমােহিনী দেবী। শরৎচন্দ্রেরা ছিলেন ছয় ভাইবােন। সবার বড় বােন অনিলা , তারপরই শরৎচন্দ্র। শরশ্চন্দ্রের পর দু’ভাই তারপর দুই বােন। সংসারের প্রতি মতিলালের উদাসীনতার জন্য দারিদ্র্য ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী। তাই শরৎচন্দ্রের ছেলেবেলা কেটেছে নিদারুণ অভাব অনটনের মধ্যে। পরে কিশাের বয়সে ভাগলপুরে মামার বাড়িতে থাকতে হয়েছিল তাকে। শরৎচন্দ্র ছােটবেলায় খুব দুরন্ত ও দুষ্টু প্রকৃতির ছিলেন। তার দুরন্তপনায় গ্রামবাসী ছিলাে অতিষ্ঠ। 

স্কুলের পন্ডিতমশাই পর্যন্ত তার অত্যাচারে ছিলেন তটস্থ।শরৎচন্দ্র ১৮৯৪ খ্রীষ্টাব্দে ভাগলপুরের তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন। পরে তিনি কলেজে ভর্তি হলেও অর্থাভাবে এফ . এ দিতে পারেননি। সেখানেই তার শিক্ষাজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। শরৎচন্দ্রের মন চলে গেল খেয়াল – খুশির রাজ্যে। তিনি থিয়েটারে অভিনয় ও গান – বাজনা নিয়ে মেতে উঠলেন। ইতিমধ্যে ১৮৯৫ সালে তার মা মারা গেলেন।

কুন্তলীন পুরস্কার প্রতিযােগিতায় ছদ্মনামে মন্দির ’ গল্পটির জন্য প্রথম পুরস্কার প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে শরৎচন্দ্রের তরুণ প্রতিভা সাহিত্যানুরাগীদের স্বীকৃতি লাভ করেছিল । তারপর থেকেই চলতে থাকল তাঁর একের পর এক মহৎ সৃষ্টি অব্যাহত গতিতে । তার অসংখ্য কালজয়ী উপন্যাস , গল্প , প্রবন্ধের মধ্যে বিরাজ বউ ’ , ‘ বিন্দুর ছেলে ’ , ‘ শ্রীকান্ত খন্ড , পল্লীসমাজ ’ , ‘ দেনা পাওনা ’ , ‘ পন্ডিত মশায় ’ , ‘ বিপ্রদাস ’ , ‘ ষােড়শী ’ , ‘ চন্দ্রনাথ ’ , ‘ শেষ প্রশ্ন ’ , ‘ বড়দিদি , ‘ বিজয়া , ইত্যাদি উপন্যাস , ‘ নিষ্কৃতি , “ রামের সুমতি , মেজদিদি , ‘ মহেশ ’ , ‘ অভাগীর স্বর্গ ’ ইত্যাদি চিরকালীন গল্প ও ‘ স্বদেশ ও সাহিত্য ’ , ‘ তরুণের বিদ্রোহ ’ প্রভৃতি প্রবন্ধ বাংলা তথা ভারতীয় সাহিত্যকে মর্যাদা দান করেছে।

এছাড়াও তিনি অনেক গুলো উপন্যাস লিখেছেন।সেগুলি হলো বড়দিদি, বিরাজবৌ, পন্ডিতমশাই, পল্লী-সমাজ, চন্দ্রনাথ, শ্রীকান্ত-প্রথম পর্ব, দেবদাস, চরিত্রহীন, দত্তা, শ্রীকান্ত-দ্বিতীয় পর্ব, গৃহদাহ, বামুনের মেয়ে, দেনা পাওনা, নব-বিধান, পথের দাবী, শ্রীকান্ত-তৃতীয় পর্ব, শেষ প্রশ্ন, শ্রীকান্ত-চতুর্থ পর্ব, বিপ্রদাস, শুভদা।বাংলা ভাষার এই সর্বশ্রেষ্ঠ কথাশিল্পী অমরঔপন্যাসিক মনীষী শরৎচন্দ্র ১৯৩৮ সনের ১৬ ই জানুয়ারি কলকাতায় অমৃতলােকে যাত্রা করেন।