রঙ্কিনী মন্দির

রঙ্কিনী মন্দির

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘রঙ্কিণী দেবীর খড়গ’ গল্পটি প্রায় সকল বাঙালিরই জানা। সানডে সাসপেন্সের সৌজন্যে গল্পটি অনেকেই শুনেওছি। সেই গল্প শুনে আপনার গায়ে কাঁটাও দিয়েছে নিশ্চয়ই। তবে আপনি কি জানেন সেই গল্পের মা রঙ্কিণীদেবী আজও বিরাজ করেন জামশেদপুরের কাছে জাদুগোড়ায় পাহাড়ের উপর অবস্থিত রঙ্কিনী মন্দিরে!

এই মন্দির স্থানীয় মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি মন্দির। প্রচলিত জনশ্রুতি অনুসারে এখান থেকে কেউ কখনও খালি হাতে ফেরেনি। মা রঙ্কিনী সকলের মনস্কামনা পূর্ণ করেছেন। তবে পূজা দেওয়ার জন্য না হলেও পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে এই মন্দিরে পৌঁছনোর অভিজ্ঞতা একটা আলাদা অনুভূতি এনে দেবেই। জামসেদপুর বা ঘাটশিলা ঘুরতে গেলে অবশ্যই রঙ্কিনী মন্দির ঘুরে আসুন।

ঝাড়খণ্ডের জাদুগোড়ায় পাহাড়ের উপর অবস্থিত রঙ্কিনী মন্দির জামসেদপুর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ঘাটশিলা থেকে মন্দিরের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। জনশ্রুতি অনুসারে মাতা রঙ্কিণী এই অঞ্চলের বনে জঙ্গলে বাস করতেন। এক স্থানীয় আদিবাসী একবার একটি মেয়েকে এক রাক্ষসকে হত্যা করতে দেখেছিলেন।

সেই দৃশ্য দেখে তিনি মেয়েটির কাছে গেলে মেয়েটি জঙ্গলে অদৃশ্য হয়ে গেল। সেই রাতেই ঐ ব্যক্তিকে দেবী রঙ্কিণী স্বপ্নাদেশ দিয়ে দেবীর একটি মন্দির তৈরি করতে বলেন। ঠিক কোন সময়ে মূল মন্দিরটি তৈরি হয়েছে জানা যায়নি। তবে মন্দিরের বর্তমান যে রূপ আমরা দেখতে পাই, তা তৈরি হয়েছে ১৯৫০ সালে। মা রঙ্কিনী দেবী কালীর একটি অবতার এবং প্রধানত পূর্ব ভারতের বিভিন্ন উপজাতি দ্বারা পূজিতা হন।

শুধুমাত্র ভূমীজ উপজাতির মানুষই এই মন্দিরের পূজারী হতে পারেন। এখানকার সমস্ত মানুষ নিয়মিত এই মন্দিরে পূজা দিতে আসেন। সারা বছর ধরেই মন্দিরে ভক্তদের ভিড় লেগে থাকে। তবে বিভিন্ন উৎসব যেমন দুর্গাপূজা, কালীপূজা এই সময়ে ভিড় প্রচণ্ড বেড়ে যায়। মন্দিরটি বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। এখানে প্লাস্টিক বা অন্যান্য পূজার সামগ্রী যত্র তত্র ফেলা উচিত নয়।

জামসেদপুর বা ঘাটশিলা ঘুরতে গেলে সেখান থেকেই একদিন সকাল সকাল গাড়ি ভাড়া করে এখানে ঘুরতে আসুন। দুটি জায়গা থেকেই এখানে আসতে প্রায় ১ ঘণ্টা সময় লাগবে। থাকবার জন্য কাছাকাছি হোটেল কিছু থাকলেও তেমন ভালো নয়। জামসেদপুর বা ঘাটশিলাতে হোটেলে থাকুন। মূল রাস্তার ওপর অবস্থিত এই মন্দির দক্ষিণ ভারতীয় রীতিতে তৈরি করা হয়েছে। রাস্তার একদিকে মন্দির এবং অন্যদিকে ভক্তদের মনস্কামনা জানানোর জন্য গাছ রয়েছে।

সেই গাছে লাল কাপড়ে নারকেল বেঁধে ভক্তেরা মনস্কামনা জানিয়ে যায়। রাস্তা দেখে পার হবেন নইলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা। মন্দিরে লম্বা গোপুরম রয়েছে, যেমনটি দক্ষিণ ভারতের মন্দিরগুলোতে দেখা যায়। গোপুরমে দেবী রঙ্কিণীর বিভিন্ন রূপ খোদাই করা আছে। মূল মন্দিরের প্রবেশদ্বারের ঠিক ওপরে দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের দৃশ্য খোদাই করা রয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য দেবতার মূর্তিও খোদাই করা রয়েছে। মন্দিরের গায়ে খোদাই করা এই দৃশ্যগুলো ভালো লাগবে। প্রবেশদ্বারের কাছে রাস্তার ওপরে রয়েছে লোহার রেলিং, যার মধ্যে দিয়ে ভক্তেরা মূল মন্দিরে পূজার জন্য লাইন দেয়।

মন্দিরের গর্ভগৃহে কোনো মূর্তি নেই। একটি পাথরকে দেবীরূপে পূজা করা হয়। হঠাৎ করেই গর্ভগৃহ থেকে পায়রাদের আচমকা আনাগোনা বেশ উপভোগ্য। মূল মন্দিরের দুই পাশে রয়েছে আরও দুটো মন্দির। ডানপাশে রয়েছে শিবমন্দির। এখানে শিবলিঙ্গ এবং নন্দীর মূর্তি রয়েছে। শিবের মাথায় জল ঢালার জন্য কাছেই টিউবওয়েল থেকে জল নিতে পারেন, কিন্তু ঘটি সঙ্গে করে আনতে হবে আপনাকে।

মূল মন্দিরের বামপাশের মন্দিরে রয়েছে গণেশের মূর্তি। এই গণেশ মন্দিরের পাশে রয়েছে পূজার সামগ্রী কেনাকাটি করার দোকান। এখান থেকে পূজার সামগ্রী কিনতে পারবেন। সারা বছর ধরেই এখানে আসা যায়। তবে মন্দিরে ফাঁকায় পূজা দিতে চাইলে একদম সকালে সাড়ে পাঁচটা থেকে ৬টার মধ্যে গেলে কোনও ভিড় পাবেন না। তবে পূজা না দিলেও একদম সকাল সকাল মন্দির ঘুরে আসুন।

বেলা বাড়ার সাথে রোদ বাড়তে থাকে। ট্রিপ টিপস কীভাবে যাবেন – জামসেদপুর বা ঘাটশিলা ঘুরতে গেলে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে একদিনের জন্য এখানে ঘুরতে আসুন।কোথায় থাকবেন – কাছাকাছি হোটেল কিছু থাকলেও তেমন ভালো নয়। জামসেদপুর বা ঘাটশিলা ঘুরতে গেলে সেখানের হোটেলে থাকুন। কি দেখবেন – রঙ্কিণী মন্দির।কখন যাবেন – সারা বছর ধরেই এখানে আসা যায়।

সতর্কতা –জুতো পড়ে মন্দিরে প্রবেশ করবেন না।এখানে প্লাস্টিক বা অন্যান্য পূজার সামগ্রী যেখানে সেখানে ফেলবেন না।একদম সকাল সকাল মন্দির ঘুরে আসুন। বেলা বাড়ার সাথে রোদ বাড়তে থাকে।মন্দিরের উলটোদিকে রাস্তার ঐপাড়ে ভক্তদের মনস্কামনা জানানোর জন্য যে গাছ রয়েছে, সেখানে যাওয়ার সময় রাস্তা দেখে পাড় হবেন নইলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা।বিশেষ পরামর্শ –মন্দিরে ফাঁকায় পূজা দিতে চাইলে একদম সকালে সাড়ে পাঁচটা থেকে ৬টার মধ্যে গেলে কোনও ভিড় পাবেন না।