মহেশ্বতা দেবীর জীবনী
মহাশ্বেতা দেবী ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক ও মানবাধিকার আন্দোলনকর্মী। তার উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হল হাজার চুরাশির মা, রুদালি, অরণ্যের অধিকার ইত্যাদি। মহাশ্বেতা দেবী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ় রাজ্যের আদিবাসী উপজাতিগুলির অধিকার ও ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করেছিলেন।
তিনি সাহিত্য আ্যকাডেমি পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার ও র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার সহ একাধিক সাহিত্য পুরস্কার এবং ভারতের চতুর্থ ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান যথাক্রমে পদ্মশ্রী ও পদ্মবিভূষণ লাভ করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান বঙ্গবিভূষণে ভূষিত করেছিল। তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই মহেশ্বতা দেবী এর জীবনী সম্পর্কে।
জন্ম ও পিতামাতা- বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা শহরে ১৪ জানুয়ারি , ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে মহাশ্বেতা দেবীর জন্ম। সম্পর্ক সূত্রে কল্লল বর্গের মনীশ ঘটক এর মতাে বিশিষ্ট সাহিত্য সাধক হলেন তার পিতা। মা ধরিত্রী দেবী। বাংলা চলচ্চিত্র জগতের আপােসহীন মহানায়ক ঋত্বিক ঘটকর্তার কাকা।
বিবাহ জীবন- তিনি বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন যে প্রবাদ প্রতিম নাট্যব্যক্তিত্বের সঙ্গে, তাঁকে বাংলার আধুনিকনাট্য জগতের পথিকৃৎ বলা হয়। তিনি হলেন নবান্নের রূপকার বিজন ভট্টাচার্য। এই অসাধারণ সাংস্কৃতিক পরম্পরার সার্থক উত্তরসুরী হিসেবে মহাশ্বেতা দেবী নিজেকে তুলে ধরেছেন। তার অকাল প্রয়াত পুত্র নবারুণ ভট্টাচার্যও বাংলার এক ব্যতিক্রমী সাহিত্য সাধক ছিলেন।
শিক্ষাজীবন- মহাশ্বেতা দেবীর শৈশব শিক্ষার সূচনা হয় রাজশাহিতে সেখান তিনি অধ্যয়ন করেন। পরে বিশ্বভারতী থেকে ইংরেজি সাহিত্যে থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতার আশুতােষ কলেজে মাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবন- তার কর্মজীবনের সূচনা হয় বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে। তারপরবিজয়গড় জ্যোতিষ রায় কলেজে ইংরেজির অধ্যাপিকা হিসাবে যােগ দেন এবং যুগান্তর পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে রং মশাল পত্রিকায় তিনি প্রথম লিখলেন। ব্যক্তিগত জীবনের ওঠাপড়ার মধ্যেই অনলস সাহিত্যচর্চায় খামতি আসেনি কখনও। দেড় শতাব্দী আগে বিরসা মুন্ডার ভাতের গন্ধমাখা স্বপ্নটা বাংলা সাহিত্যে ধরা পড়ল ১৯৭৭ সালে মহাশ্বেতাদেবীর অরণ্যের অধিকার – এ। ছােটনাগপুরের পাহাড় , জঙ্গল , ঘিরে রূপকথার জগৎ বাংলা সাহিত্যে ঘুরে ফিরে আসছে। এসেছে পুরুলিয়া না খেতে পাওয়া মানুষদের কথা। জঙ্গলে পড়ে থাকা আদিম কালাে মানুষের দারিদ্র্য লড়াই নিয়ে বারে বারে সােচ্চার হয়েছেন তিনি। কখনাে লেখনীর মাধ্যমে , কখনও মিটিং মিছিলের মাধ্যমে। অরণ্যের অধিকার ’ এ বাঙালি পাঠককে জোর করে ঝাকুনি দিয়ে দেখিয়ে ছিল। জঙ্গলমহল নিয়ে আমাদের ঠুনকো আবেগের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে। ওই এলাকার রিক্ত মানুষগুলাের কত চোখের জল , রক্তঘাম।
পুরস্কার- ১৯৭৯ সালে এই উপন্যাসের জন্য সাহিত্য একাদেমী পুরস্কার প্রাপ্তি শুধু সাহিত্যিক হিসাবে তাঁকেসর্বভারতীয় স্বীকৃতি দিল তাই নয় , আগামী দিনে তার জীবন কোন খাতে বইবে তাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল এই বই। পরবর্তী সময়ে সাহিত্যিক মহাশ্বেতাকে ছাপিয়ে গিয়েছেন সমাজকর্মী মহাশ্বেতা।
উপন্যাস- মহাশ্বেতার সাহিত্যিক জীবন অবশ্য শুরু হয়েছিল আরাে অনেক বছর আগে। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ‘ দেশ ‘ পত্রিকায় পদ্মিনী ও “ যশােবন্তী ” গল্পদুটি লেখেন মহাশ্বেতা দেবী। পঞ্চাশের দশকের গােড়ায় মহাশ্বেতা দেবী গিয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশে।১৯৫৬ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘ ঝাসির রানি ‘ — এইমধ্যপ্রদেশের লােককথা ও ইতিহাসের মিশেলে তৈরি। ১৯৫৭ খ্রি : প্রকাশিত “ নটী ”। মধ্য – যাট ও ষাট দশকের গােড়ায় অবিভক্ত বিহারে পালামৌ , হাজারিবাগ , সিংভূমের বিস্তীর্ণ এলাকা ঘুরে সেখানকার বেগার শ্রমিক প্রথা এবং জনজাতিদের আর্থিক দুরবস্থা নিয়ে লেখেন ‘ অপারেশন বসাই টুডু ’ , ‘ অরণ্যের অধিকার এবং ‘ চোট্টি মুন্ডা ও তার তীর। ১৯৭৪ সালে নকশাল আন্দোলনের পটভূমিতে লেখা ‘ হাজার চুরাশির মা ‘ বাংলা সাহিত্যে সাড়া ফেলে দিয়েছিল।
মৃত্যু- জরাগ্রস্ত শরীরের যন্ত্রণা দীর্ঘদিন বুকে নিয়ে ২৯ শে জুলাই ২০১৬ বৃহস্পতিবার সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী শবরমাতা মহাশ্বেতাদেবীর মহাপ্রয়ান ঘটে।