এলাহাবাদ স্তম্ভ এর ইতিহাস

এলাহাবাদ স্তম্ভ মৌর্য্য সাম্রাজ্যের সময়কালে নির্মিত একটি অশোক স্তম্ভ। এই স্তম্ভ মৌর্য্য সম্রাট অশোকের লিপি ছাড়াও গুপ্ত সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের প্রশস্তি উৎকীর্ণ রয়েছে।এই স্তম্ভে সপ্তদশ শতাব্দীর মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের লিপিও বর্তমান।কোন এক সময় এই স্তম্ভটিকে তার প্রকৃত অবস্থান থেকে সরিয়ে আকবরের এলাহাবাদ দুর্গে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই দুর্গ বর্তমানে ভারতীয় সেনাবাহিনী দ্বারা অধিকৃত রয়েছে বলে জনগণের জন্য উন্মুক্ত নয় এবং এই স্তম্ভ দর্শন করতে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়ে থাকে।৩৫ ফুট উচ্চ এলাহাবাদ স্তম্ভ পালিশকরা একটি একক বেলেপাথর দ্বারা নির্মিত। এই স্তম্ভের নিচের দিকের ব্যাস ৩৫ ইঞ্চি এবং ওপরের দিকের ব্যাস ২৬ ইঞ্চি। অন্যান্য অশোক স্তম্ভে প্রাপ্ত ঘণ্টাকৃতি পদ্মফুলের ভাস্কর্য্য যুক্ত স্তম্ভশীর্ষ এই স্তম্ভে অনুপস্থিত। আলেকজান্ডার কানিংহামের মতে, এই স্তম্ভের শীর্ষে একটি সিংহের মূর্তি ছিল।
অশোকের শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, এই স্তম্ভ কৌশাম্বী নামক প্রাচীন নগরীতে স্থাপন করা হয়, যা বর্তমান অবস্থান থেকে প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছিল। কৌশাম্বীতে অবস্থিত অপর একটি স্তম্ভের ভাঙ্গা অংশের উপস্থিতি দেখে অনেকে মনে করেন যে, এলাহাবাদ স্তম্ভ ও এই ভাঙ্গা স্তম্ভটি অতীতে পাশাপাশি অবস্থান করত।
ত্রয়োদশ শতক থেকে মুসলিম শাসনে শুরু হলে বহুবার এই স্তম্ভটিকে স্থানান্তর করা হয় ও অবশেষে ১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে এলাহাবাদ শহরে সরিয়ে আনা হয়।এই সময় স্তম্ভের শীর্ষে একটি গোলক স্থাপন করা হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে জোসেফ টাইফেনথেলার এই স্তম্ভের নকশা অঙ্কন করেন।
১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড স্মিথ স্তম্ভের শীর্ষে নিজের নকশানুযায়ী একটি সিংহের মূর্তি স্থাপন করার চেষ্টা করেন, কিন্তু আলেকজান্ডার কানিংহাম এই পদক্ষেপকে বাতিল করে দেন।১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দে এশিয়াটিক সোসাইটির জেমস প্রিন্সেপ যখন এলাহাবাদ দুর্গের মধ্যে এই স্তম্ভটি দেখতে পান, ততদিনে আবহাওয়ার প্রকোপে এই স্তম্ভের শিলালিপিগুলি যথেষ্ট ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। এই স্তম্ভে অশোক, সমুদ্রগুপ্ত ও জাহাঙ্গীর এই তিনজন সম্রাটের লিপি বর্তমান।