ঘাটালের দর্শনীয় স্থান

ঘাটালের দর্শনীয় স্থান

ঘাটাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একটি শহর ও পৌরসভা এলাকা।শহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২২.৬৭° উত্তর ৮৭.৭২° পূর্ব।সমুদ্র সমতল হতে এর গড় উচ্চতা হল ৫ মিটার।ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে ঘাটাল শহরের জনসংখ্যা হল ৫১,৫৮৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫২% এবং নারী ৪৮%।

এখানে সাক্ষরতার হার ৭৬%। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৮৩%, এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৬৯%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, তার চাইতে ঘাটাল এর সাক্ষরতার হার বেশি।ঘাটালে অনেক দর্শনার্থী বেড়াতে আসে।পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই ঘাটালের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।

১.পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান- ঘাটাল ব্লকের বীরসিংহ গ্রামে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্ম। ওই গ্রামেই বিদ্যাসাগর ও তাঁর কাজের উপর একটি সংগ্রহশালা রয়েছে. এটি সপ্তাহের সবদিনই খোলা থাকে। 

২.ভাসাপুল- ১৮৫০ সালে মি: ওয়াটসন নামের একজন ব্রিটিশ বণিক ভাসাপুলটি তৈরি করেন। ভাসাপুলটির প্রধান আকর্ষণ হল এটি সারিবদ্ধ কতগুলি নৌকোর উপর ভাসমান একটি পুল। পুলটির কাঠামোটি কতগুলি কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরি হয়েছে। গোটা ভারতবর্ষে এই ধরনের পুল খুব কমই দেখা যায়। মি: ওয়াটসন এই ভাসাপুলটি তাঁর ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তৈরি করেছিলেন। তাই এটিতে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ১৯০৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বরের বেঙ্গল ফেরি অ্যাক্টেএটি সাধারণ মানুষজনদের যাতায়াতের জন্য মুক্ত করে দেওয়া হয়। ওই ভাসাপুলটি ঘাটালের অনেকগুলি আশ্চর্যের মধ্যে একটি। 

৩.সূর্যঘড়ি- ঘাটাল মহকুমার অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন সূর্যঘড়ি। সম্ভবত ১৮১৭ সালে ওই ঘড়িটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সূর্যের আলোর মাধ্যমে সময় নির্দেশ করে। দাসপুর-২ ব্লকের খানজাপুর হাইস্কুল সংলগ্ন পাল পুকুরের পাড়ে দেখতে পাওয়া যাবে ওই দর্শনীয় বস্তুটি।  ঘাটাল-রানিচক পিচ রাস্তা, বেলিয়াঘাটা বাসস্টপ থেকে কামালপুর হয়ে কিম্বা  দাসপুর থেকে ভরতপুর দুবরাজপুর কামালপুর হয়েও যাওয়া যায়। প্রশান্তকুমার পাল ওই গ্রামেই জন্মে ছিলেন। তিনি পেশায় ছিলেন ওড়িশা ও বিহারের স্বনামধন্য ইঞ্জিনিয়ার। তাঁরই অসাধারণ কীর্তি পাথর নির্মিত ওই সূর্য ঘড়ি। 

৪.সৎসঙ্গ বিহার- শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল সৎসঙ্গ নামের আশ্রমটির প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে গোটা বিশ্বে পরিচিত। ঘাটাল টাউনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কুশপাতায় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের অনেকগুলি মন্দির রয়েছে। শিলাবতী নদীর তীরের ওই মন্দিরগুলিতে মনোরম আশ্রমিক পরিবেশ রয়েছে। সৎসঙ্গ বিহারের পাশে শিশুউদ্যানটি ছোটছোট ছেলেমেয়েদের খুব পছন্দের খেলাধুলার জায়গা।

৫.খেপুত- খেপুত হল ঘাটালের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। জায়গাটি রূপনারায়ণ নদের কিছুটা পশ্চিমে অবস্থিত। ফিঙে রাজার দাঙ্গা নামের একটি বড় টিলা সেখানে দেখা যায়। হয়তো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক হস্তনির্মিত নিদর্শন টিলাটির গভীরে নিহিত রয়েছে। ওখানে বেশকিছু প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার ছাড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। যেমন-  বিষ্ণু মূর্তি, বুদ্ধ মূর্তি ইত্যাদি।ওই ঐতিহাসিক স্থানটির আরও যত্ন, অনুসন্ধান ও খননের প্রয়োজন বলে অনেকে মনে করছেন।

৬.নাড়াজোল রাজবাড়ী- একসময় যেটি খান রাজার বাসভবন ছিল সেই নাড়াজোল এখন ঘাটালের একটি জীর্ণ প্রাসাদ। নাড়াজোল তার সুবর্ণ যুগে একটি জমকালো রাজ্য ছিল যা বহু দূর-দূরান্তের মানুষের কাছেও পরিচিত ছিল। সেই সময়কার আটচালার মতো মন্দির গুলিতে এখনও কোনও জীর্ণতার ছোঁয়া লাগেনি। এখানের কিছু বিখ্যাত নির্মাণ হল গোবিন্দ জিউ এর নবরত্ন, রাজা মোহনলাল খানের তৈরি সীতারামের মন্দির, হরিনাজিয়ারার শিব মন্দির। জলহরি হল ওখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপত্য। এটি একটি বড় পুষ্করিনীর মাঝে তৈরি এক বিশেষ স্থাপত্য।