দৌল গোবিন্দ মন্দির

অসমের উত্তর গুয়াহাটির চন্দ্রভারতী পাহাড়ে শ্রীশ্রী দৌল গোবিন্দ মন্দির অবস্থিত৷ প্রধানতঃ এই মন্দিরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করা হয়৷প্রত্যেক বছরের ফেব্রুয়রী মাসে স্থানীয় লোকরা এই মন্দিরে ফাগুয়া উৎসব উদ্যাপন করে।এই মন্দিরের উৎপত্তি সম্বন্ধে প্রচলিত কাহিনী শুনা যায়৷ ইংরাজদের সময়ে শাসন পরিচালনার জন্য স্থানীয় কিছু অভিজাতসম্প্রদায়ের হাতে শাসনের কিছু দায়িত্ব অর্পিত করা হয়েছিল৷
এর নলবারী অঞ্চলে দেখাশুনার দায়িত্ব বর্তায় গর্গরাম বরুয়ার উপর৷ গর্গরাম বরুয়া ছিলেন পণ্ডিত আনন্দরাম বরুয়ার পিতা৷ গর্গরাম বরুয়া দেখাশুনার দায়িত্বে থাকার সময়ে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিল৷ বর্তমান রঙিয়া শহরের সীমায় অবস্থিত জাকারীয়া নামের একটি গাঁওয়ের কাছে সন্ধ্যাঝাড় নামের একটি অটব্য অরণ্য ছিল৷
সেই জাকারীয়া গাঁওয়ের এক ব্রাহ্মণর বাড়িতে এক কপিল বর্ণের গাই ছিল৷ গাইটি রোজ শেষ রাত্রে ডিঙির বন্ধন খুলে সন্ধ্যাঝাড় অরণ্যে গিয়ে একটি বিরিণা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে দুধ ঢেলে পুনরায় গোয়ালে ফিরে আসত৷ সদরামীন বরুয়া এই কথা জানতে পেরে সেই রহস্য উদ্ঘাটন করার জন্য বিরিণা গাছটি থাকা স্থানে খননকাজ করান এবং সেখান থেকে একটি শ্রীকৃষ্ণর বিগ্রহ উদ্ধার হয়৷
সেই মূর্তি ভক্তি সহকারে শোভাযাত্রা করে এনে চন্দ্রভারতী পাহাড়ে স্থাপন করা হয়৷ সেখানে আগে থেকে শ্রীশ্রীঘনশ্যাম রায়েরও বিগ্রহ ছিল৷ তখন থেকে সেই বিগ্রহের সঙ্গে নতুন বিগ্রহেরও পূজা-সেবা শুরু হয়৷ ক্রমে দৌল এবং ফাকুবা উৎসবের দিন আগত হয়৷ সাথে সাথে পূজারীর চিন্তা হ'ল কোন বিগ্রহকে দৌলে তুলবেন৷
অবশেষে পূজারী বিগ্রহের সামনে প্রণিপাত করে জানান যে, যে বিগ্রহ দৌলে চাপবেন তিনি যেন চার আঙুল অগ্রসর হয়ে প্রমাণ দেখান৷ পরদিন পূজারী দেখেন যে, নতুন আনা বিগ্রহটি চার আঙুল অগ্রসর হয়ে আছে৷ এমন ঘটনায় পূজারীর মন শান্ত হয়৷ এর পরে যথারীতি নতুন বিগ্রহকে দৌলে স্থাপন করা হ'ল এবং তখন থেকে এই বিগ্রহ দৌল গোবিন্দ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে৷ফাল্গুন-চৈত্র মাসে কয়েকটি কার্যসূচীর মাধ্যমে এখানে দৌল উৎসব পালন করা হয়৷ এছাড়া, দৈনিক অগণন ভক্তের আনা পূজা এবং তাদের মধ্যে ভোগের প্রসাদ বিতরণ দৌল গোবিন্দ মন্দিরের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য৷