সিঙ্গুরের ডাকাতে কালী

সিঙ্গুরের ডাকাতে কালী

হুগলী জেলার কালীক্ষেত্র সন্ধানে বেড়িয়ে কিছুটা ঘাবড়ে যাওয়ার দশা। কালী কলকাত্তা ওয়ালী না বলে যদি কালী হুগলীওয়ালী বলি তাহলে কিছু ভুল বলা হয়না। সারা জেলা জুড়ে রয়েছে অনেক গুলি সাধনপীঠ,.সারা হুগলী জেলায় কালীক্ষেত্র খুঁজতে গলে খুব অদ্ভুত ভাবে চোখে পড়ে এগুলির সাথে জড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন কিছু ডাকতের নাম। গল্পে কিংবা ইতিহাসে আমাদের জানা যে ডাকাতরা একসময় শক্তিস্বরূপ মা কালীর আরাধনা করতো। কাজেই ডাকাত প্রতিষ্টিত কালী আজও পূজিত হওয়া স্বাভাবিক।

সারা জেলা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এমন অনেক ডাকাতদের আরাধ্য কালীক্ষেত্র। আজ সেই গল্প শোনাবো। পুরানো এক কালী পুজো। যে কালীর নামই ডাকাতে কালী। সিঙ্গুরের অন্তর্গত, বৈদ্যবাটি তারকেশ্বর রোড এর ধারে পুরুষোত্তমপুর এলাকায় অবস্থিত এই মন্দির। এই ডাকাতে কালী মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে নানা লোকশ্রুতি, নানা ইতিহাস ,আর অবশ্যই ডাকাতদের গল্প। সে গল্পে আবার জড়িয়ে আছেন স্বয়ং মা সারদা দেবী। মন্দিরের সেবাইত দের সাথে আলাপে উঠে এলো এই নানান কাহিনী। কথিত কাহিনী এই যে, অসুস্থ শ্রী রামকৃষ্ণদেবকে দেখতে কামারপুকুর থেকে দক্ষিণেশ্বর যাচ্ছেন মা সারদা, সন্ধ্যা তখন নেমে গেছে। হঠাত্‍ মা এর পথ আটকায় রঘু ডাকাত ও গগন ডাকাত ও তাদের দলবল,ডাকাতির উদ্দেশ্যে।

এই সময় হঠাত্‍ই এই দুই ডাকাত সর্দার ভয়ানক রক্তচক্ষু মা কালীর মুখ দেখতে পায়। রঘু আর গগন নিজেদের ভুল বুঝে সারদা মায়ের কাছে ক্ষমা চান এবং রাত হয়ে যাওয়ার জন্য মা কে সে রাতে তাদের আস্তানায় থাকার ব্যবস্থা করে দেয় । মা সারদাকে তারা রাতে চালভাজা আর কড়াই ভাজা খেতে দেন। কথিত আছে সেই থেকেই নাকি কালী পুজোর দিন চাল ভাজা আর কড়াই ভাজা প্রসাদ দেওয়া হয়।  গল্প কথা লোককথা যাই হোক সেই প্রচলিত রীতি আজও একই ভাবে বজায় রয়েছে। প্রথা মেনে কালী পুজোর দিন শূদ্রের আনা গঙ্গা জল ঘটে দিয়ে পুজো শুরু হয়।বলি প্রথা আজও আছে মন্দিরে। চারপ্রহরে চারবার পুজো ও ছাগ বলি হয়।

এই মাতৃমূর্তি দুই ডাকাত সর্দার প্রতিষ্ঠা করলেও ডাকাতেকালীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করে স্থানীয় চালকেবাটি গ্রামের মোড়ল পরিবার। উচুঁ ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরটি চালা মন্দির। প্রাচীনকালে টেরাকোটার কাজ থাকলেও আজ প্রায় লুপ্ত প্রায়। মন্দিরের সামনে রয়েছে নাটমন্দির। তবে এই মন্দিরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গর্ভগৃহের কাঁঠাল কাঠের দরজাটি।

দারুশিল্পের সুন্দর নিদর্শন এই প্রাচীন দরজাটি। লোককথা, ঐতিহ্য আর দেবী মাহাত্ম্য নিয়ে সিঙ্গুর পুরুষোত্তমপুর এর ডাকতে কালী মন্দির আজও উজ্জ্বল। এই মন্দিরের দেবী মাহাত্ম্য এতই জনপ্রিয় যে তিনটি গ্রামে এই প্রতিমা ছাড়া অন্য কোন প্রতিমার পুজো হয় না। এমনকি , এই এলাকায় কোন বাড়িতে অন্য কোন প্রতিমা বা মূর্তির ছবিও থাকেনা। হুগলী জেলার মানচিত্রে ডাকাতে কালীর এক প্রসিদ্ধ কালীক্ষেত্র। শুধু কালী পুজো নয় সারা বছরই ভক্ত সমাগমে জমজমাট হয়ে থাকে এই মন্দির চত্ত্বর ।