বয়ঃসন্ধির পরিবর্তনে দিতে পারে মানসিক অবসাদ, বলছে সমীক্ষা!

বয়ঃসন্ধির পরিবর্তনে দিতে পারে মানসিক অবসাদ, বলছে সমীক্ষা!

বয়ঃসন্ধির (Adolescence) সময়ে গলার আওয়াজ, হাবভাব বা অন্যান্য জিনিসে যেমন পরিবর্তন আসে, তেমনই পরিবর্তন আসে চেহারাতেও। কেউ কেউ একটু মোটা হয়ে যায়। কারও চেহারায় অন্যরকম পরিবর্তন আসে। এই চেহারা সংক্রান্ত পরিবর্তন নিয়েই খুশি হয় না এই বয়সের ছেলে-মেয়েরা। সমীক্ষা বলছে, যার ফলে ডিপ্রেশনে (Depression) চলে যেতে পারে তারা। যা একটু বড় হলে বোঝা যায়। নেগেটিভ বডি ইমেজের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের একটা সম্পর্ক রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাঁদের কথায়, নেগেটিভ বডি ইমেজ (Negative Bopdy Image) নিয়ে সমস্যায় ভুগলে তা মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি একটি সমীক্ষা বলছে, যারা নিজেদের চেহারা অর্থাত্‍ বডি শেপ (Body Shape) নিয়ে খুশি নয়, তাদের ধীরে ধীরে অবসাদ আসছে পরে। বেশ কিছু সমীক্ষা বলছে, বয়ঃসন্ধিতে থাকা ৬১ শতাংশ ছেলে-মেয়ে তাদের চেহারা নিয়ে খুশি থাকে না। Journal of Epidemiology & Community Health-এর প্রকাশিত একটি সমীক্ষা বলছে, এর ফলে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের প্রবণতাও তাদের মধ্যে বেড়ে যায়।

তবে, এই চেহারা নিয়ে খুশি না হওয়া অর্থাত্‍ Body Dissatisfaction নিয়ে তেমন ভাবে চর্চা হয় না বা কেউ সে ভাবে চিন্তিত নয়। অনেকেই মনে করে, এটা অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাসের জন্য হয়ে থাকে। কথা হল, অনেকেই ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদে ভোগে। অনেক বাচ্চারাও ভোগে। তারা যে চেহারা নিয়ে খুশি নয় বলেই অবসাদে ভোগে এটা কী ভাবে বোঝা গেল? সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বাচ্চারা যারা আর পাঁচটা সাধারণ বাচ্চার মতোই বড় হয়েছে, তাদের মধ্যে এই বাচ্চা বয়সে ডিপ্রেশনের (Depression) আর তেমন কারণ নেই।

পারিবারিক সমস্যা বা পড়াশোনায় সমস্যা বা স্কুলে অন্য কোনও কারণে সমস্যা নেই। সেখানেই দেখা গিয়েছে তারা নিজেদের চেহারা নিয়ে স্যাটিসফায়েড নয়। সমীক্ষাটি করা হয়েছে ১৪ বছর বয়সের বাচ্চাদের উপরে। তাদের যে প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছে, তাতে Extremely Satisfied থেকে Extremely Dissatisfied-এর অপশন দেওয়া হয়েছে। নিজেদেরকে রেটিং দিতে বলা হয় ওজন, বুকের ছাতি, থাই, মুখ, চুল-সহ অন্যান্য গঠনের ভিত্তিতে। এ বার তারাই যখন ১৮ বছর বয়সে গিয়ে পৌঁছচ্ছে, তাদের অনেকের মধ্যেই ডিপ্রেশন দেখা দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে এই সমস্যা প্রায় একই রকম।

তবে, ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা নিজেদের চেহারা নিয়ে বেশি ডিসস্যাটিসফায়েড। অর্থাত্‍ এ ক্ষেত্রে ডিপ্রেশনে যাওয়ার প্রবণতাও তাদেরই বেশি। এই অবসাদের পিছনে যে কারণ দু'টি সব চেয়ে বেশি দায়ী, তা হল ওজন (Weight) ও চেহারা। দেখা গিয়েছে, ১৪ বছর বয়সে ৩২ শতাংশ মেয়ে ও ১৪ শতাংশ ছেলে নিজেদের চেহারা ও ওজন নিয়ে ডিসস্যাটিসফায়েড। এ এক্ষেত্রে আবার ওজনের থেকে সকলের কাছে বেশি সমস্যার চেহারা অর্থাত্‍ নিজেদের শরীরের গঠন।

১৪ বয়সে যাদের মধ্যে এই সমস্যা তেমন একটা প্রভাব ফেলেনি, দেখা গিয়েছে তারাই ১৮ বছর বয়সে গিয়ে অবসাদে ভুগছে। এই সংক্রান্ত প্রথম সমীক্ষার লেখক ও Erasmus University Rotterdam বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র গবেষক Anna Bornioli জানান, নিজের অ্যাপিয়ারেন্স কেমন হবে তার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে প্রচুর ভাবনা-চিন্তা, ধারণা। এ ক্ষেত্রে ওজন নিয়ে সমস্যাকেও তা ছাপিয়ে যায়।

একজন মানুষ নিজেকে যেমন ভাবে প্রেজেন্ট করতে চাইছে, তা যদি সে না পারে, তাতে মানসিক সমস্যা তৈরি হয়। এতে কেউ তাকে ভালো লাগছে বলল বা আকর্ষিত হল, তাতে কিছু যায়-আসে না, সমস্যার সমাধান হয় না। এর আগে বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ছেলেদের রোগা হওয়ার প্রবণতা তেমন থাকে না। এ বিষয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক Mike C. Parent জানান, ছেলেরা রোগা হতে চায় না। তারা সাধারণত মাসল বানাতে চায়।

মোটা হয়ে যাওয়াটা তাদের কাছে কোনও সমস্যার নয়। তিনি বলেন, এটা বাদ দিয়ে যদি বডি স্যাটিসফ্যাকশনের বিষয়টি দেখা যায়, তা হলে দেখা যাবে ছেলেরাও চেহারার পরিবর্তন করতে চায়। চেহারা যেমনই হোক তাকে পজিটিভ ভাবে গ্রহণ করাটাই ভালো! Change Your Mind, Change Your Body: Feeling Good About Your Body and Self After 40 -এর লেখক ও মনোবিদ Ann Kearney-Cooke-এর মতে চেহারা নিয়ে নিজের মনোভাব পরিবর্তন করা প্রয়োজন। যদি তা করা যায়, তা হলে সুস্থ ভাবে বাঁচা যাবে। এতে কনফিডেন্ট হওয়া যাবে অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে তিনি কিছু টিপস দিয়েছেন-

১.চেহারা অর্থাত্‍ বডি একেক জনের এক এক রকম হয়। সবার সাইজ ও শেপ এক হয় না।

২. নিজের সঙ্গে অন্য কারও তুলনা না করা ভালো।

৩. নিজের চেহারা নিয়ে যেটা ভালো লাগবে সেটা করা দরকার। ইচ্ছের বাইরে কিছু না করাই ভালো।

৪. যেটা গায়ে হচ্ছে না, ছোট হয়ে গিয়েছে, সেগুলি কাউকে দান করে দেওয়া যেতে পারে। এতে একটা ভালো কাজও হবে, ফলে মন ভালো থাকতে পারে।

৫. যখনই চেহারা নিয়ে কোনও নেগেটিভ চিন্তা মাথায় আসবে, সেখানেই তা বন্ধ করে দেওয়া উচিত্‍।

৬. কেউ চেহারা নিয়ে মন্তব্য করলে তাকে মুখের উপরে উত্তর দিয়ে দেওয়া। সেগুলি নিয়ে বাড়িতে ফিরে আর চিন্তা না করা।

৭. অনেক সময়ে হয়, সোশ্যাল মিডিয়া দেখে মানুষ নিজেকে নিয়ে অবসাদে ভোগে। মাথায় রাখতে হবে, সোশ্যাল মিডিয়া যা দেখাচ্ছে, তা পুরোটাই বাস্তব নয়। সত্যি নয়।

৮. সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) সময় কী ভাবে, কী দেখে কাটানো যাবে, তা ঠিক করে নেওয়া।

৯. যেমন খুশি, তেমন করেই নিজের যত্ন নেওয়া!